সারাদেশে শুরু হলো এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা ২০২৫
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু
২০২৫ সালের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা আজ সারা বাংলাদেশে একযোগে শুরু হয়েছে। এই পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, যা তাদের শিক্ষাগত যাত্রায় পরবর্তী ধাপে উন্নীত করবে। প্রথম দিনে বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, এবং তত্ত্বীয় পরীক্ষা চলবে ১০ আগস্ট পর্যন্ত। এরপর শুরু হবে ব্যবহারিক পরীক্ষা। এই নিবন্ধে আমরা এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৫-এর বিস্তারিত তথ্য, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা, নির্দেশনা, এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করব।
এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৫: পরীক্ষার্থীর সংখ্যা
এ বছর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন মোট ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে:
-
সাধারণ শিক্ষা বোর্ড: ১০ লাখ ৫৫ হাজারের বেশি পরীক্ষার্থী।
-
মাদ্রাসা বোর্ড (আলিম): ৮৬ হাজারের বেশি পরীক্ষার্থী।
-
কারিগরি বোর্ড: ১ লাখ ৯ হাজারের বেশি পরীক্ষার্থী।
পরীক্ষাগুলো সারা দেশের ২,৭৯৭টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছর (২০২৪) এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ১৩ লাখ ৩২ হাজার ৯৯৩ জন শিক্ষার্থী, অর্থাৎ এ বছর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৮১ হাজার ৮৮২ জন কমেছে।
পরীক্ষার সময়সূচি ও প্রক্রিয়া
-
প্রথম দিন: বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা।
-
তত্ত্বীয় পরীক্ষা: ১০ আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত।
-
ব্যবহারিক পরীক্ষা: তত্ত্বীয় পরীক্ষার পর শুরু হবে।
পরীক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে:
-
পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে।
-
ওএমআর শিটে সঠিকভাবে তথ্য পূরণ ও বৃত্ত ভরাট করতে হবে।
-
শুধুমাত্র সাধারণ ক্যালকুলেটর ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে।
-
এমসিকিউ ও সৃজনশীল পরীক্ষার মধ্যে কোনো বিরতি থাকবে না।
-
মোবাইল ফোন বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস কেন্দ্রে নিয়ে প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
-
তত্ত্বীয়, এমসিকিউ, এবং ব্যবহারিক পরীক্ষায় আলাদাভাবে উত্তীর্ণ হতে হবে।
-
প্রতিটি পরীক্ষায় উপস্থিতি স্বাক্ষর বাধ্যতামূলক।
নিরাপত্তা ও নকল প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা বোর্ডগুলো পরীক্ষা সুষ্ঠু ও নকলমুক্ত রাখতে বেশকিছু কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে:
-
প্রশ্নফাঁস প্রতিরোধ: প্রশ্নফাঁসের গুজব রোধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে।
-
কোচিং সেন্টার বন্ধ: ১৫ আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত সারা দেশে কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
-
পরীক্ষা কেন্দ্রের নিরাপত্তা: প্রশ্নপত্র গ্রহণের সময় পুলিশ ও থানার ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক।
-
সিসিটিভি ও পোস্টার: পরীক্ষা কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন এবং নকল প্রতিরোধে সচেতনতামূলক পোস্টার লাগানো হয়েছে।
-
জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ: কেন্দ্রের বাইরে জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে মাইক ব্যবহার করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্যবিধি ও পরিবেশ নিশ্চিতকরণ
-
মাস্ক বাধ্যতামূলক: পরীক্ষার্থী, কক্ষ পরিদর্শক, এবং সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক।
-
হ্যান্ড স্যানিটাইজার: কেন্দ্রে প্রবেশের সময় হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে।
-
বিদ্যুৎ ব্যবস্থা: পরীক্ষার সময় বিদ্যুৎ বিভ্রাট এড়াতে স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিসকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
-
ঘড়ি ব্যবহার: শুধুমাত্র এনালগ কাঁটাযুক্ত ঘড়ি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সুষ্ঠু পরীক্ষার জন্য ৩৩ দফা নির্দেশনা জারি করেছে। উল্লেখযোগ্য কিছু নির্দেশনা হলো:
-
প্রতি ২০ জন পরীক্ষার্থীর জন্য একজন কক্ষ পরিদর্শক নিয়োগ।
-
শিক্ষার্থীদের মধ্যে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
-
প্রশ্নপত্র নির্ধারিত সেট অনুযায়ী খোলা হবে, এবং অব্যবহৃত সেট ফেরত পাঠাতে হবে।
আইনশৃঙ্খলা ও প্রশাসনিক প্রস্তুতি
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সমন্বয়ক খন্দকার এহসানুল কবির জানিয়েছেন, পরীক্ষার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসন সার্বক্ষণিক সতর্ক থাকবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব বা পরীক্ষার পরিবেশ নষ্টকারী যেকোনো তৎপরতা কঠোরভাবে দমন করা হবে।
২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ডের কঠোর নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা পরিচালনার প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়। শিক্ষার্থীদের প্রতি পরামর্শ, নির্দেশনা মেনে পরীক্ষায় অংশ নিন এবং সাফল্য অর্জন করুন।










