বিদেশ থেকে ফিরেই স্বপ্নভঙ্গ: ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় মা-স্ত্রী-সন্তানসহ সাতজনকে হারালেন বাহার
ওমানপ্রবাসী মো. বাহার উদ্দিন দীর্ঘ আড়াই বছর পর স্বদেশের মাটিতে পা রেখেছিলেন। পরিবারের কাছে ফেরার আনন্দে তাঁর হৃদয় ছিল উচ্ছ্বসিত। ফিরে আসার আগে নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন—“স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার”। কিন্তু সেই স্বপ্ন মুহূর্তেই রূপ নেয় এক ভয়াবহ দুঃস্বপ্নে।
বুধবার ভোরে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে নোয়াখালীর নিজ বাড়ির পথে রওনা দেন বাহার ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু পথে বেগমগঞ্জ উপজেলার এক স্থানে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি খালে পড়ে যায়। চালক ঘুমিয়ে পড়ায় এই দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে পুলিশ। মুহূর্তেই বিলীন হয়ে যায় একটি পরিবারের প্রাণের সব আলো।

মর্মান্তিক ওই দুর্ঘটনায় পানিতে ডুবে মারা যান বাহারের মা, স্ত্রী, কন্যা, নানী, বড় ভাইয়ের স্ত্রী ও দুই ভাতিজি। স্থানীয়রা জানান, চালক দুর্ঘটনার পর খাল থেকে উঠে পালিয়ে যায়। বাহারসহ পাঁচজন গ্লাস ভেঙে গাড়ি থেকে বের হয়ে এলেও বাকিরা আটকা পড়েন এবং দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে পানির নিচে থেকে প্রাণ হারান।
চোখের সামনে প্রিয়জনদের হারিয়ে বাকরুদ্ধ বাহার উদ্দিন। তাঁর কণ্ঠের আর্তনাদে কেঁপে উঠেছে গ্রাম। দুই বছর বয়সী মেয়ে মীমের নিথর দেহ বুকে চেপে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলছেন— “তোর জন্যই তো ফিরেছিলাম মা, তুই কেন লাশ হয়ে এলি?”
নিহতদের মধ্যে ছিলেন—
- স্ত্রী কবিতা আক্তার (২৪)
- মেয়ে মীম আক্তার (২)
- মা মুরশিদা বেগম (৫০)
- নানী ফয়জুন নেছা (৭০)
- ভাবী লাবনী আক্তার (২৫)
- ভাতিজি রেশমি আক্তার (৯)
- ভাতিজি লামিয়া আক্তার (৮)
রেশমি ও লামিয়া স্থানীয় স্কুলের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ছিল। তাদের জন্য কিছুদিন আগেই কেনা হয়েছিল নতুন বই ও স্কুলব্যাগ। এখন সেই ব্যাগগুলোর দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে কাঁদছেন তাদের মা-বাবা।
বাহারের শ্বশুর ইস্কান্দার মির্জা বলেন, “চালকের ঘুমের কারণে এমন দুর্ঘটনা হয়েছে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমি চালকের ফাঁসি চাই, যেন আর কোনো পরিবার এমনভাবে শেষ না হয়।”

জানানো হয়, নিহত ছয়জনকে পশ্চিম চৌপল্লী গ্রামের কাচারিবাড়ি এলাকায় দাফন করা হবে বিকেল ৫টায়। আর ফয়জুন নেছার দাফন হবে চর মোহাম্মদপুর গ্রামে।
চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি মো. মোবারক হোসেন বলেন, “এটা শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, এটা একটি গোটা পরিবারের শেষ হয়ে যাওয়ার ঘটনা। চালকের সামান্য অসতর্কতা কতটা ভয়াবহ হতে পারে, এটাই তার দৃষ্টান্ত।”

তিনি আরও জানান, গাড়িচালক এখনো পলাতক। তাঁর পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংবেদনা ও প্রার্থনা: এই মর্মান্তিক ঘটনায় আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি এবং বাহার উদ্দিন ও তাঁর পরিবারের প্রতি সহানুভূতি জানাচ্ছি। আল্লাহ যেন তাঁদের এই শোক সহ্য করার শক্তি দেন।










