ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরোধের অন্যতম প্রধান কারণ কাশ্মীর সমস্যা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত ভাগ হওয়ার পর থেকেই এই অঞ্চলকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে একাধিক যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। কাশ্মীর নিয়ে বিরোধ আজও সম্পূর্ণরূপে সমাধান হয়নি এবং এটি দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক পরিবেশকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে চলেছে।
কাশ্মীর সমস্যার উৎপত্তি
১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীনতার সময় ব্রিটিশ নীতি অনুসারে দেশীয় রাজ্যগুলোকে ভারত বা পাকিস্তানের সঙ্গে যোগদানের সুযোগ দেওয়া হয়। কাশ্মীরের তৎকালীন মহারাজা হরি সিং প্রথমে স্বাধীন থাকতে চেয়েছিলেন। তবে পাকিস্তানের মদদপুষ্ট উপজাতীয় বাহিনী কাশ্মীর আক্রমণ করলে, মহারাজা ভারতের সাহায্য চান এবং ভারতের সঙ্গে অন্তর্ভুক্তির চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এর ফলে ভারতীয় সেনাবাহিনী কাশ্মীরে প্রবেশ করে এবং প্রথম ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হয়।
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধসমূহ
১৯৪৭-৪৮ সালের যুদ্ধ
এই যুদ্ধ কাশ্মীরের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে সংঘটিত হয়। ভারত-পাকিস্তান উভয় পক্ষের সংঘর্ষের পর জাতিসংঘ হস্তক্ষেপ করে এবং ১৯৪৯ সালে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়। কাশ্মীরকে দুই ভাগে বিভক্ত করে ভারত ও পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে দুই অংশ রাখা হয়, যা আজও কার্যকর রয়েছে।
১৯৬৫ সালের যুদ্ধ
১৯৬৫ সালে পাকিস্তান গোপনে অপারেশন জিব্রাল্টার চালু করে, যার মাধ্যমে কাশ্মীরে বিদ্রোহ সৃষ্টির পরিকল্পনা করা হয়। তবে ভারতীয় বাহিনী সফল প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং উভয় পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। পরে তাশকেন্দ চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি হয়।
১৯৭১ সালের যুদ্ধ
এই যুদ্ধ মূলত বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের কারণে সংঘটিত হয়েছিল, তবে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক সংঘর্ষও ঘটে। ফলস্বরূপ, পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হয়ে বাংলাদেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধ
১৯৯৯ সালে পাকিস্তানি সেনা ও মুজাহিদিন গোষ্ঠীগুলো কারগিল সেক্টরে প্রবেশ করে। ভারতীয় বাহিনী পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে তাদের সরিয়ে দেয়। এই যুদ্ধ দুই দেশের মধ্যে পারমাণবিক উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলে।
কাশ্মীর সমস্যা ও বর্তমান অবস্থা
কাশ্মীর আজও ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রধান রাজনৈতিক ও সামরিক দ্বন্দ্বের কেন্দ্রবিন্দু। ২০১৯ সালে ভারত সরকার কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করলে পাকিস্তান এর তীব্র বিরোধিতা করে। দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত সংঘর্ষ এবং রাজনৈতিক উত্তেজনা অব্যাহত রয়েছে।
উপসংহার
কাশ্মীর সমস্যা দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে জটিল ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্বগুলোর মধ্যে একটি। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এই বিরোধ শুধুমাত্র সামরিক সংঘর্ষই নয়, বরং কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক টানাপোড়েনেরও অন্যতম কারণ। এই সমস্যা সমাধানের জন্য সংলাপ এবং শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে টেকসই সমাধান খোঁজা প্রয়োজন।