‘মাইনাস ওয়ান’ ফর্মুলা : পিটিআইর ভেতরেই দ্বন্দ্ব তীব্র
পাকিস্তানে ইমরান খানকে নিয়ে মাইনাস ওয়ান ফর্মুলায় নতুন ষড়যন্ত্র

ইমরান খান
পাকিস্তানের রাজনীতিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ভবিষ্যৎ নিয়ে তীব্র উত্তেজনার মধ্যে ‘মাইনাস ওয়ান’ ফর্মুলা আবারও আলোচনায় এসেছে। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দাবি করেছে, তাদের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানকে রাজনৈতিকভাবে দুর্বল করার জন্য একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র চলছে। এই প্রচেষ্টাকে তারা ‘ঘৃণিত ক্যাম্পেইন’ হিসেবে অভিহিত করেছে।

পিটিআইর অভিযোগ: ষড়যন্ত্রের মূল কারিগর
পাকিস্তানে ইমরান খানকে নিয়ে মাইনাস ওয়ান ফর্মুলায় নতুন ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ করেছে পিটিআ্পই। পিটিআইর মুখপাত্র শেখ ওয়াকাস আকরাম পিএমএল-এন নেত্রী আজমা বুখারির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, “একটি রাজপ্রাসাদ-সমর্থিত ষড়যন্ত্র চলছে, যার উদ্দেশ্য পিটিআইকে ভেতর থেকে ধ্বংস করা।” তিনি আরও জানান, এই পরিকল্পনার মাধ্যমে ইমরান খানকে রাজনৈতিকভাবে বাদ দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
খাইবার পাখতুনখাওয়ার মুখ্যমন্ত্রী আলী আমিন গান্ডাপুর আরও সরাসরি অভিযোগ করে বলেন, “এই ষড়যন্ত্রের লক্ষ্য খাইবার পাখতুনখাওয়ায় ‘গভর্নর শাসন’ জারি করে পিটিআই সরকারকে উৎখাত করা।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, “ইমরান খান পিটিআইর মূল শক্তি। তিনি যদি বলেন, আমি এক মিনিটের মধ্যে সরকার ছাড়ব। এই সরকার তাঁরই।”
পিএমএল-এন’র পাল্টা অভিযোগ
পিএমএল-এন নেত্রী আজমা বুখারি পাল্টা দাবি করে বলেন, “ইমরান খানকে তাঁর নিজের দলের সদস্য এবং বোন আলিমা খান কোণঠাসা করেছেন।” তিনি আরও বলেন, “যিনি একদিন নওয়াজ শরিফকে রাজনীতি থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, তিনি নিজেই আজ দলে উপেক্ষিত।” আজমা অভিযোগ করেন, আলিমা খান এবং পিটিআইর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টিম গান্ডাপুরের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে।
তিনি আরও দাবি করেন, পিটিআই বর্তমানে তিনটি গোষ্ঠীতে বিভক্ত। কেন্দ্রীয় পর্যায়ে তিনটি গ্রুপ এবং খাইবার পাখতুনখাওয়ায় জুনায়েদ আকবর, আতিফ খান এবং বিদ্রোহী সদস্যদের নেতৃত্বে তিনটি পৃথক গোষ্ঠী রয়েছে।
পাঞ্জাব বনাম খাইবার পাখতুনখাওয়া
আজমা বুখারি দাবি করেন, “পাঞ্জাব এখন সুশাসন, যোগ্যতা এবং স্বচ্ছতার প্রতীক। অন্যদিকে, খাইবার পাখতুনখাওয়া গত ১২ বছর ধরে দুর্নীতি ও অযোগ্যতার কবলে।” তিনি গান্ডাপুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, “প্রাদেশিক বাজেট সময়মতো পাস না হলে তাঁকে পদত্যাগ করতে হতো।”
জবাবে গান্ডাপুর বলেন, “আমাদের বাজেট সেরা। ইমরান খানের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা যেকোনো পরিবর্তন আনতে প্রস্তুত।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় সরকার আর্থিক জরুরি অবস্থা এবং গভর্নর শাসন জারির মাধ্যমে প্রাদেশিক সরকার দখলের পরিকল্পনা করছে।
পিটিআইর দৃঢ় অবস্থান
পিটিআইর মুখপাত্র শেখ ওয়াকাস বলেন, “ইমরান খানকে ‘মাইনাস’ করার সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। জনগণ তাঁকে আরও শক্তিশালী করেছে।” তিনি সরকার-সমর্থিত বাহিনীর বিরুদ্ধে দল ভাঙার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে বলেন, “ইমরান খান শুধু পিটিআইর নেতা নন, তিনি জাতির নেতা। তিনি পাকিস্তানের আশার প্রতীক।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা আগেও ষড়যন্ত্রের ঝড় পেরিয়েছি, এবারও পারব। শাসক গোষ্ঠী এবং তাদের সমর্থকরা আবারও ব্যর্থ হবে।”
পাকিস্তানের রাজনীতিতে ইমরান খানকে কেন্দ্র করে চলমান এই উত্তেজনা দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার উপর প্রভাব ফেলতে পারে। পিটিআই এবং পিএমএল-এন’র মধ্যে এই দ্বন্দ্ব কীভাবে সমাধান হবে, তা নির্ভর করছে আগামী দিনের রাজনৈতিক সমীকরণের উপর।