দিঘী বাদশার নাম বৈরমখাঁর

বৈরমখাঁর দিঘী
বরিশাল জেলার ঐতিহাসিক বাকেরগঞ্জ বর্তমানে বৃহত্তর এই উপজেলায় রয়েছে বহু ঐতিহাসিক প্রাচীন নিদর্শন, যার মধ্যে বৈরম খাঁ দিঘী অন্যতম। বাকেরগঞ্জ বৃটিশ শাসনামলে জেলা একটি পূর্ণাঙ্গ জেলা ছিলো।
বরিশাল পটুয়াখালী মহাসড়কের পূর্ব পাশে অবস্থিত ঐতিহাসিক বৈরম খাঁর দীঘি। বৈরম খাঁ ১৮ শতকের প্রথম দিকে বাকলায় আসেন। কেউ বলেন তিনি নবাবের কর্মচারী ছিলেন আবার অনেকে বলেন আগা বাকেরের কর্মচারী ছিলেন, তবে কোনটি সঠিক তার প্রমাণ নেই। ইতিহাস ঘাটলে জানা যায় বৈরাম খাঁ মোগল সাম্রাজ্যের ইতিহাসে প্রায় বিস্মৃত এক নাম। তিনি ছিলেন মোগল সৈন্যবাহিনীর প্রধান সেনাপতি। সম্রাট হুমায়ুনের অত্যন্ত আস্থাভাজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং এক ক্ষুরধার কূটনীতিবিদ; ছিলেন সম্রাট আকবরের একজন অভিভাবক, প্রধান পরামর্শদাতা, উপদেষ্টা, শিক্ষক এবং সম্রাটের সবচেয়ে বিশ্বস্ত সহযোগী। ভারত উপমহাদেশে মোগল সাম্রাজ্য বিস্তারে তার একনিষ্ঠতা, বিশ্বস্ততা এবং অবদান ছিল প্রশ্নাতীত। ১৫০১ খ্রিস্টাব্দে আফগানিস্তানের বাদাখশানে তার জন্ম। তবে বাকেরগঞ্জের বৈরমখাঁ দিঘী সম্পর্কে অনেকের ধারনা ১৫থেকে ১৬ শ শতকের মধ্য সময়ে এটি খনন করা হয়।
বৈরমখাঁ এ অঞ্চলে অনেক দীঘি খনন এবং মসজিদ নির্মাণ করেন। এর মধ্যে বাকেরগঞ্জের এই দীঘিটি অন্যতম। বর্তমানে বিশাল এই জলধারটিতে স্থানীয়রা সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়ে মাছ চাষ করছে। সুদৃশ্য এই দীঘির চার পাশে এক সময় উঁচু পাড় ছিল। স্থানীয় লোকজন পাড় কেটে বসতি স্থাপন করেছে। চারপাশের সবুজ বৃক্ষ ঘেরা ছায়া-নিবিড়, পাখির কলকাকলীতে দর্শনার্থীদের নয়ন জুড়ায়। পূর্বে এখানে দূর-দুরান্ত থেকে অনেক পর্যটক আসত। বর্তমানে এটি বিরিশাল ফিশিং জোন করে বরশি দিয়ে মাছ ধরার উৎসব করা হয়। এজন্য শুক্রবারে অনেক দর্শনার্থী আসে। বাংলাদেশ ক্রিকেট তারকা মেহেদী হাসান মিরাজ এর পৈত্রিক বাড়ি এই দিঘীর পূর্ব পাড়ে।
আরো পড়ুন:
বাংলার এক প্রাচীন জনপদ কলসকাঠী: ক্ষয়ে যাওয়া দালান গুলো আজো স্বাক্ষী হয়ে আছে
ইচ্ছে হলেই কোন এক বিকেলে প্রিয়জনকে নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন বৈরম খাঁর অমর কীর্তি এই দীঘির পাড়ে যা আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিবে কয়েক শতকের পুরোনো ইতিহাস। স্থানীয় লোকের মাঝে কথিত আছে পূর্বে এই দীঘিতে মেজবানী অনুষ্ঠানের জন্য কেউ পাত্র চাইলে রাতে পাড়ে পাত্র উঠে আসত, আবার ব্যাবহার শেষে পাড়ে রেখে দিলে দীঘিতে চলে যেত। একদিন কেহ একটি পাত্র রেখে দেওয়ায় আর কোন দিন পাত্র উঠেনি। লোক মুখে কথিত আছে “দীঘি বাদশার নাম বৈরম খাঁর”। যা নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে কৌতুহলের শেষ নেই। এছাড়াও রয়েছে অনেক রহস্যময় লোককথা। বৈরম খাঁ চানপুরা গ্রামে একটি দীঘি খনন করান, দীঘির পাড়েই গজনী শাহ নামে এক সাদক ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। এজন্য বৈরম খাঁর দীঘি গজনী শাহ্-র দীঘি বলে পরিচিতি পায়। এতে বৈরম খাঁ ঈর্ষান্বিত হয়ে গজনী শাহের শিরচ্ছেদ করেন। গজনি শাহ নিজের ছিন্ন মাথা হাতে নিয়ে কিছুদুর হেটে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। বর্তমানে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সৌন্দর্য অনেকটা কমে গেছে। তবে ইতিহাসের এই নিবর স্বাক্ষী অবশ্যই সংরক্ষণ করা উচিত বলে দাবী স্থানীদের।
লেখক: এস এম পলাশ
কবি, সাংবাদিক, ইতিহাস গবেষক।








