রবিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৫, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
রবিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৫, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

দিঘী বাদশার নাম বৈরমখাঁর  

এস এম পলাশ প্রকাশিত: বুধবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৫, ৩:২৪ পিএম ই-পেপার প্রিন্ট ভিউ
দিঘী বাদশার নাম বৈরমখাঁর  

বৈরমখাঁর দিঘী

বরিশাল জেলার ঐতিহাসিক বাকেরগঞ্জ বর্তমানে বৃহত্তর এই উপজেলায় রয়েছে বহু ঐতিহাসিক প্রাচীন নিদর্শন, যার মধ্যে বৈরম খাঁ দিঘী অন্যতম। বাকেরগঞ্জ বৃটিশ শাসনামলে জেলা একটি পূর্ণাঙ্গ জেলা ছিলো।

বরিশাল পটুয়াখালী মহাসড়কের পূর্ব পাশে অবস্থিত ঐতিহাসিক বৈরম খাঁর দীঘি। বৈরম খাঁ ১৮ শতকের প্রথম দিকে বাকলায় আসেন। কেউ বলেন তিনি নবাবের কর্মচারী ছিলেন আবার অনেকে বলেন আগা বাকেরের কর্মচারী ছিলেন, তবে কোনটি সঠিক তার প্রমাণ নেই। ইতিহাস ঘাটলে জানা যায় বৈরাম খাঁ মোগল সাম্রাজ্যের ইতিহাসে প্রায় বিস্মৃত এক নাম। তিনি ছিলেন মোগল সৈন্যবাহিনীর প্রধান সেনাপতি। সম্রাট হুমায়ুনের অত্যন্ত আস্থাভাজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং এক ক্ষুরধার কূটনীতিবিদ; ছিলেন সম্রাট আকবরের একজন অভিভাবক, প্রধান পরামর্শদাতা, উপদেষ্টা, শিক্ষক এবং সম্রাটের সবচেয়ে বিশ্বস্ত সহযোগী। ভারত উপমহাদেশে মোগল সাম্রাজ্য বিস্তারে তার একনিষ্ঠতা, বিশ্বস্ততা এবং অবদান ছিল প্রশ্নাতীত। ১৫০১ খ্রিস্টাব্দে আফগানিস্তানের বাদাখশানে তার জন্ম। তবে বাকেরগঞ্জের বৈরমখাঁ দিঘী সম্পর্কে অনেকের ধারনা ১৫থেকে ১৬ শ শতকের মধ্য সময়ে এটি খনন করা হয়।

বৈরমখাঁ এ অঞ্চলে অনেক দীঘি খনন এবং মসজিদ নির্মাণ করেন। এর মধ্যে বাকেরগঞ্জের এই দীঘিটি অন্যতম। বর্তমানে বিশাল এই জলধারটিতে স্থানীয়রা সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়ে মাছ চাষ করছে।  সুদৃশ্য এই দীঘির চার পাশে এক সময় উঁচু পাড় ছিল। স্থানীয় লোকজন পাড় কেটে বসতি স্থাপন করেছে। চারপাশের সবুজ বৃক্ষ ঘেরা ছায়া-নিবিড়, পাখির কলকাকলীতে দর্শনার্থীদের নয়ন জুড়ায়। পূর্বে এখানে দূর-দুরান্ত থেকে অনেক পর্যটক আসত। বর্তমানে এটি বিরিশাল ফিশিং জোন করে বরশি দিয়ে মাছ ধরার উৎসব করা হয়। এজন্য শুক্রবারে অনেক দর্শনার্থী আসে। বাংলাদেশ ক্রিকেট তারকা মেহেদী হাসান মিরাজ এর পৈত্রিক বাড়ি এই দিঘীর পূর্ব পাড়ে।

আরো পড়ুন:

বাংলার এক প্রাচীন জনপদ কলসকাঠী: ক্ষয়ে যাওয়া দালান গুলো আজো স্বাক্ষী হয়ে আছে

ইচ্ছে হলেই কোন এক বিকেলে প্রিয়জনকে নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন বৈরম খাঁর অমর কীর্তি এই দীঘির পাড়ে যা আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিবে কয়েক শতকের পুরোনো ইতিহাস। স্থানীয় লোকের মাঝে কথিত আছে পূর্বে এই দীঘিতে মেজবানী অনুষ্ঠানের জন্য কেউ পাত্র চাইলে রাতে পাড়ে পাত্র উঠে আসত, আবার ব্যাবহার শেষে পাড়ে রেখে দিলে দীঘিতে চলে যেত। একদিন কেহ একটি পাত্র রেখে দেওয়ায় আর কোন দিন পাত্র উঠেনি। লোক মুখে কথিত আছে “দীঘি বাদশার নাম বৈরম খাঁর”। যা নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে কৌতুহলের শেষ নেই। এছাড়াও রয়েছে অনেক রহস্যময় লোককথা। বৈরম খাঁ চানপুরা গ্রামে একটি দীঘি খনন করান, দীঘির পাড়েই গজনী শাহ নামে এক সাদক ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। এজন্য বৈরম খাঁর দীঘি গজনী শাহ্-র দীঘি বলে পরিচিতি পায়। এতে বৈরম খাঁ ঈর্ষান্বিত হয়ে গজনী শাহের শিরচ্ছেদ করেন। গজনি শাহ নিজের ছিন্ন মাথা হাতে নিয়ে কিছুদুর হেটে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। বর্তমানে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সৌন্দর্য অনেকটা কমে গেছে। তবে ইতিহাসের এই নিবর স্বাক্ষী অবশ্যই সংরক্ষণ করা উচিত বলে দাবী স্থানীদের।

লেখক: এস এম পলাশ

কবি, সাংবাদিক, ইতিহাস গবেষক।

শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বাকেরগঞ্জে দুই যুবদল নেতা বহিষ্কার

ডেস্ক নিউজ প্রকাশিত: শনিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৫, ৯:৩২ পিএম
শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বাকেরগঞ্জে দুই যুবদল নেতা বহিষ্কার

বাকেরগঞ্জ প্রতিনিধি :
দলীয় নীতি, আদর্শ ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বরিশাল দক্ষিণ জেলা যুবদলের আওতাধীন বাকেরগঞ্জের দুই যুবদল নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃতরা হলেন—বাকেরগঞ্জ পৌর যুবদলের সদস্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মনির এবং বাকেরগঞ্জ উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক হাসান আল ইমাম খোকন।
২৯ নভেম্বর (শুক্রবার) কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-দফতর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূইয়া স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের প্রমাণ মিলায় তাদেরকে প্রাথমিক সদস্যসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, দলের স্বচ্ছতা, আদর্শ এবং সাংগঠনিক শৃঙ্খলা রক্ষায় কেন্দ্রীয় যুবদল সবসময় কঠোর অবস্থানে রয়েছে। যুবদলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের শৃঙ্খলার প্রতি দায়িত্বশীল হওয়ার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ দফতর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূইয়া।

ব্যারিস্টার জোহার  আগমন উপলক্ষে বিশাল মটরসাইকেল শো ডাউন

ডেস্ক নিউজ প্রকাশিত: শনিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৫, ৯:০৪ পিএম
ব্যারিস্টার জোহার  আগমন উপলক্ষে বিশাল মটরসাইকেল শো ডাউন

“কাতি গেল, আগুন আইলো”  গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া আলো উৎসবের ঐতিহ্য 

ডেস্ক নিউজ প্রকাশিত: শনিবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৫, ৭:০১ পিএম
“কাতি গেল, আগুন আইলো”  গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া আলো উৎসবের ঐতিহ্য 

“কাতি গেল, আগুন আইলো”  গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া আলো উৎসবের ঐতিহ্য 

বাংলার গ্রামীণ জীবনে কার্তিক মাসের একটি আলাদা আবহ আছে। শস্য উত্তোলনের অপেক্ষা, প্রকৃতির শুষ্কতা, ঠান্ডা হাওয়ার আগমন সব মিলিয়ে এই মাসটি ছিল গ্রামবাসীর কাছে যেমন কষ্টের সময়, তেমনি নতুন শুভ সময়ের আগমনী বার্তা। আর এই সময়টিকেই কেন্দ্র করে জন্ম নিয়েছিল এক অনন্য ঐতিহ্য—কার্তিকের শেষ রাতে আগুন জ্বালানোর উৎসব, যার প্রজন্মান্তরের উচ্চারণ ছিল

“কাতি গেলো, আগুন আইলো… কইরা পুটি মাছ দুয়ারে পইলো…”

এই চরণ শুধু একটি ছড়া নয়; এটি ছিল একটি শ্বাস নেওয়া জীবন্ত সংস্কৃতি, যা গ্রামবাংলার হৃদয়ে আলো ছড়াতো শিশুর হাসির মতোই নিষ্পাপভাবে।


শৈশবের তুলসিতলা থেকে গ্রামের মাঠ এক উৎসবের পথচলা

কার্তিক মাসের ৩০ তারিখ সন্ধ্যা নামলেই গ্রামে এক ধরনের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ত। ছোট-বড় সবাই ছুটে যেত তুলসিতলায়। সেদিন সন্ধ্যা যেন আগুনকে কেন্দ্র করে তৈরি এক উৎসবের অঘোষিত আয়োজন।

বাঁশের মাথায় খড় বেঁধে বানানো হতো ‘ভোলা’ কিংবা ‘বইড়ে’  এক ধরনের মশাল। ছেলেরা দৌড়ে যেত মাঠের দিকে, বড়রা নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে দেখতেন, আর আশপাশ ভরে যেত স্তবকের মতো স্লোগানে:

“কাতি গেল, আগুন আইলো…”

আগুনের লাল আলো আর শিশুর দৌড়ঝাঁপে আকাশ-পাতাল এক সুরে মিলে যেত। মনে হতো অন্ধকারের বুক যেভাবে আলোতে ভেঙে যায়, মানুষও তেমনি অশুভ শক্তির ভয়কে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যায়।


ঐতিহ্যের ভেতরের বিশ্বাস

গ্রামের বড়দের মুখে প্রচলিত ছিল
কার্তিক হলো অশুভ মাস।

এ সময়ে অভাব-অনটন, রোগব্যাধি, অজানা ভয়–এসবের প্রভাব নাকি বেশি থাকত। তাই কার্তিকের শেষ দিনে মানুষ আগুন জ্বেলে দূর করত অশুভ শক্তিকে। আগুন হয়ে উঠত

  • সুরক্ষার প্রতীক
  • শুভ সময়ের আহ্বান
  • অন্ধকারের বিরুদ্ধে মানুষের সাহস
  • নতুন দিনের আলো

আগুনের মশাল ওঠানো ছিল এক ধরনের প্রার্থনা পৃথিবী যেন আলোয় ভরে ওঠে, ঘরে যেন দুঃখ কমে, রোগবালাই দূরে থাকে।


সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মিলনমেলা

এই রাত ছিল শুধু আগুন ঘোরানোর অনুষ্ঠান নয়; এটি ছিল এক ধরনের সামাজিক সংযোগ।

গ্রামের শিশুরা দৌঁড়াতো, বড়রা নির্দেশ দিতেন, মেয়েরা উঠোনে দাঁড়িয়ে দেখত, আর পুরো গ্রাম যেন এক সন্ধ্যার জন্য মিলে যেত।

আগুনের গন্ধ, খড় পোড়ার ধোঁয়া, শিশুর হাসি, আর রাতের ঠাণ্ডা হাওয়া সবকিছু মিলে এই উৎসব তৈরি করত এক অদ্ভুত নস্টালজিয়া, যা আজো অনেকের বুকের ভেতর উষ্ণ হয়ে থাকে।


আস্তে আস্তে বিলীন হওয়া এক ঐতিহ্য

সময় বদলেছে, মানুষের জীবনযাত্রা পাল্টেছে। নিরাপত্তা, ব্যস্ততা, আধুনিকতা—সব মিলিয়ে এই উৎসবটি এখন প্রায় হারিয়ে গেছে।

যে উৎসব কখনো আলোয় আলোকিত করত গ্রামের আকাশ, আজ তা দেখা যায় কেবল কিছু বিচ্ছিন্ন অঞ্চলে।
শিশুরা আগুন ঘোরানোর আনন্দের বদলে এখন ব্যস্ত মোবাইলের আলোয়।
তুলসিতলা, বাঁশ-খড়, দৌড়ঝাঁপ সবই স্মৃতির ফ্রেমে আটকে আছে।


তবু স্মৃতি জ্বলে থাকে আলোর শিখার মতো

আজও যখন কেউ শৈশবের স্মৃতি মনে করে বলে ওঠে

“কাতি গেল, আগুন আইলো…”

মনে হয় সেই আগুন আবার জীবিত হলো।
কারণ ঐতিহ্য শুধু ইতিহাস নয়—
এটি শেকড়ের গল্প, এটি আমাদের গ্রামবাংলার প্রাণ, এটি আমাদের মানুষ হওয়ার পথচিহ্ন।

যতদিন আমরা স্মৃতি হাতে ঐতিহ্যকে মনে রাখি,
যতদিন কোনো শিশু আগুন দেখে আনন্দে চিৎকার করে ওঠে,
ততদিন এই উৎসব হারাবে না

এটি বেঁচে থাকবে আমাদের হৃদয়ে, আমাদের সংস্কৃতিতে, আমাদের শিকড়ে।