বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ২৯ কার্তিক ১৪৩২
বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ২৯ কার্তিক ১৪৩২

নিউট্রন তারা: এক চা-চামচেই ৪০০ কোটি টনের ওজন

ডেস্ক নিউজ প্রকাশিত: শনিবার, ৮ নভেম্বর, ২০২৫, ৩:১৬ এম ই-পেপার প্রিন্ট ভিউ
নিউট্রন তারা: এক চা-চামচেই ৪০০ কোটি টনের ওজন

🌠 নিউট্রন তারা কী?

নিউট্রন তারা (Neutron Star) হলো মহাবিশ্বের সবচেয়ে ঘন ও শক্তিশালী জ্যোতিষ্কগুলোর একটি। যখন কোনো বিশাল তারা (যেমন সূর্যের চেয়ে ৮ থেকে ২০ গুণ বড় তারা) তার জীবনচক্রের শেষ প্রান্তে পৌঁছে যায়, তখন সেটি সুপারনোভা বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়ে যায়।
এই বিস্ফোরণের পর তারার কেন্দ্র এত প্রবল চাপে ভেঙে পড়ে যে, পরমাণুর প্রোটন ও ইলেকট্রন একত্রে মিশে শুধুই নিউট্রন তৈরি করে।
এভাবেই জন্ম নেয় এক নিউট্রন তারা—যা পুরোপুরি নিউট্রন দিয়ে গঠিত, অবিশ্বাস্যভাবে ঘন এবং মহাশক্তিশালী।


⚖️ মাত্র এক চা-চামচে ৪০০ কোটি টন!

ভাবুন তো, মাত্র এক চা-চামচ নিউট্রন তারার পদার্থের ওজন হবে প্রায় ৪০০ কোটি টন!
অর্থাৎ, এত অল্প পরিমাণ পদার্থের ওজনই পৃথিবীর সব পাহাড়, সমুদ্র, শহর—সব মিলিয়েও পারবে না টক্কর দিতে।

এই অবিশ্বাস্য ঘনত্বের কারণ হলো—নিউট্রন তারায় পদার্থ এতটা চাপে সংকুচিত থাকে যে, একটি সাধারণ চা-চামচে প্রায় ১০²⁷ কিলোগ্রাম ভর থাকতে পারে।
এটা এমন এক অবস্থা যেখানে পদার্থের ভেতরকার ফাঁকা স্থান সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যায়, শুধু ঘন নিউট্রন একসাথে গাঁথা থাকে।


💥 পৃথিবীতে পড়লে কী ঘটবে?

যদি নিউট্রন তারার এক চা-চামচ পরিমাণ পদার্থ কোনোভাবে পৃথিবীতে এসে পড়ে, তাহলে কী হবে?
উত্তর ভয়ঙ্কর—পৃথিবী মুহূর্তেই চুরমার হয়ে যাবে!
কারণ সেই পদার্থের অপরিসীম মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এত বেশি হবে যে, তা নিজের আশেপাশের সবকিছুকে টেনে নিয়ে এক সেকেন্ডেরও কম সময়ে ধ্বংস করে ফেলবে।


🌌 কত বড় নিউট্রন তারা?

নিউট্রন তারার ব্যাস প্রায় ২০ কিলোমিটার—অর্থাৎ একটি শহরের সমান ছোট, কিন্তু ভেতরে রয়েছে সূর্যের চেয়েও বেশি ভর!
একটি নিউট্রন তারার ভর সাধারণত সূর্যের ১.৪ গুণ পর্যন্ত হতে পারে, অথচ আকারে তা হাজার গুণ ছোট।
এই কারণেই এটি মহাবিশ্বের সবচেয়ে ঘন পদার্থগুলোর একটি হিসেবে পরিচিত।


🔭 বিজ্ঞানীদের বিস্ময় ও গবেষণা

বিজ্ঞানীরা নিউট্রন তারাকে নিয়ে বহু বছর ধরে গবেষণা করছেন। রেডিও টেলিস্কোপের মাধ্যমে এর বিকিরণ পর্যবেক্ষণ করে তাঁরা জানতে পেরেছেন যে, অনেক নিউট্রন তারা পালসার (Pulsar) নামে পরিচিত যেগুলো দ্রুত ঘূর্ণন করে নিয়মিত রেডিও তরঙ্গ নির্গত করে।
নিউট্রন তারার ঘনত্ব, চৌম্বক ক্ষেত্র ও মাধ্যাকর্ষণ বিজ্ঞানীদের কাছে এখনও এক মহাবিস্ময়।


🌠 শেষ কথা

নিউট্রন তারা আমাদের মহাবিশ্বের এক বিস্ময়কর সৃষ্টি — যেখানে ঘনত্ব, শক্তি ও রহস্য মিলেমিশে এক অনন্য উদাহরণ গড়ে তুলেছে।
মাত্র এক চা-চামচ পরিমাণ পদার্থই যদি পৃথিবী ধ্বংস করতে পারে, তাহলে পুরো তারার শক্তি কল্পনাকেও হার মানায়!

মহাবিশ্ব আসলেই কতটা অজানা ও বিস্ময়কর—নিউট্রন তারা তারই এক জীবন্ত প্রমাণ।

তথ্য সূত্র : ইন্টারনেট : সম্পাদনা লেখক এস এম পলাশ

বাকেরগঞ্জে গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু মামলায় স্বামী সহ আটক ২

ডেস্ক নিউজ প্রকাশিত: বুধবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৫, ১১:৫৪ পিএম
বাকেরগঞ্জে গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু মামলায় স্বামী সহ আটক ২

বাকেরগঞ্জে গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু, চার জনের বিরূদ্ধে হত্যা মামলা। আটক ২

বাকেরগঞ্জ (বরিশাল) প্রতিনিধি: বরিশালের বাকেরগঞ্জে এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় নিহতের স্বামী অন্ত ফকিরসহ (২৫) সহ চারজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে।

নিহতের নানা মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হক ঘটনার একদিন পর মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাদী হয়ে বাকেরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে প্রধান আসামি করা হয়েছে নিহতের স্বামী অন্তু ফকিরকে।

সোমবার (১০ নভেম্বর) রাতে উপজেলার ভরপাশা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের কৃষ্ণকাঠি গ্রামের মোশাররফ ফকিরের বাড়িতে গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু হয়।

নিহত গৃহবধূর নাম লামিয়া আক্তার নদী (২১)। তিনি কৃষ্ণকাঠি গ্রামের মোশাররফ ফকিরের ছেলে অন্ত ‌ফকিরের স্ত্রী। খবর পেয়ে বাকেরগঞ্জ থানা পুলিশ রাত ১২টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে।

নিহত গৃহবধূর শ্বাশুড়ি শিল্পী বেগম জানান, সোমবার পুত্রবধূকে ডাকতে গিয়ে তার টিনসেড বিল্ডিং ঘরের দক্ষিণ পাশের রুমে জানালা দিয়ে তাকিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না প্যাঁচিয়ে গলায় ফাঁস দেওয়া ঝুলতে অবস্থায় দেখতে পান। ওইসময় তিনি দরজা ভেঙে নদীকে ঝুলন্ত থেকে নামিয়ে ডাক-চিৎকার দিলে স্থানীয় লোকজন এসে রাত রাত ১১টার দিকে বাকেরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

নিহতের মা নাজমা বেগম বলেন, আমার মেয়েকে নির্যাতন করে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। সোমবার সকালেও নদী জামাই অন্তু ফকিরকে নিয়ে জন্মদিনের কেক কাটে। অথচ ওই রাতেই স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়িসহ সবাই মিলে তাকে হত্যা করেছে। তার মেয়ের শরীরে আঘাতে চিহ্ন রয়েছে বলেও তিনি জানান। মেয়েকে হত্যা করে জামাই অন্তু ফকির পালিয়ে গেছে। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।

এ বিষয়ে বাকেরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জানান, সোমবার রাত ১১টার পর লামিয়া আক্তার নদী নামে এক গৃহবধূকে মৃত অবস্থায় তার শাশুড়ি হাসপাতালে নিয়ে আসেন। পরে তিনি পুলিশকে খবর দিলে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

বাকেরগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘মরদেহের সুরতহাল করে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের নানা শামসুল হক বাদী হয়ে নামধারী ৩ থেকে ৪ জনকে ও অজ্ঞাত ২ থেকে ৩ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। আমরা ইতোমধ্যে প্রধান আসামি ও তার মাকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করেছি। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের অভিযান চলছে।

আজ থেকে হাজার বছর আগে কেমন ছিলো বাংলার ভূপ্রকৃতি

এস এম পলাশ প্রকাশিত: বুধবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৫, ৮:৩৩ পিএম
আজ থেকে হাজার বছর আগে কেমন ছিলো বাংলার ভূপ্রকৃতি

এক সহস্রাব্দ পূর্বের বাংলা: ভূপ্রকৃতি ও জনজীবনের এক কাল্পনিক চিত্র

আজ থেকে প্রায় ১০০০ বছর আগে, অর্থাৎ একাদশ শতাব্দীতে, আমরা যে বাংলাকে চিনি, তার ভূপ্রকৃতি ও জনজীবন ছিল আজকের চেয়ে অনেক ভিন্ন। এই সময়টি ছিল বাংলার ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ, যখন পললভূমি ও নদীমাতৃক পরিবেশের সঙ্গে জনবসতি এবং সংস্কৃতির এক নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠছিল। এই নিবন্ধে আমরা সেই সময়ের বাংলার ভূপ্রকৃতি, মানুষের জীবনযাপন, পেশা, খাদ্যাভ্যাস এবং সামাজিক পরিবেশের একটি কাল্পনিক চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করব।

ভূপ্রকৃতি: সবুজ বদ্বীপের প্রাথমিক রূপ

এক সহস্রাব্দ পূর্বে বাংলার ভূপ্রকৃতি ছিল মূলত একটি সক্রিয় এবং গতিশীল বদ্বীপ অঞ্চল। আজকের মতো সুসংহত ও সুদৃঢ় ভূমিরূপ তখনো গঠিত হয়নি। এর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো ছিল:

  • সক্রিয় বদ্বীপ গঠন: গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনার পলিবাহিত স্রোতধারার দ্বারা বদ্বীপটি সমুদ্রের দিকে ক্রমাগত প্রসারিত হচ্ছিল। বিশাল আকারের পললভূমি, নতুন গঠিত চর এবং অগভীর জলাভূমি ছিল এই অঞ্চলের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
  • নদী ও জলাভূমির প্রাধান্য: নদীগুলো ছিল বাংলার জীবনরেখা। আজকের মতো অনেক সুনির্দিষ্ট নদীপথ ছিল না; বরং অসংখ্য ছোট-বড় নদী, খাল, বিল এবং হ্রদের এক জটিল জালিকা সমগ্র অঞ্চলজুড়ে বিস্তৃত ছিল। বর্ষাকালে vast অঞ্চল প্লাবিত হতো, এবং শুষ্ক মৌসুমে অনেক জলাভূমি শুকিয়ে যেত।
  • ম্যানগ্রোভ ও গভীর বন: উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে আজকের সুন্দরবনের চেয়েও বিস্তৃত ম্যানগ্রোভ বনভূমি ছিল। এই বনগুলো ছিল প্রাকৃতিক ঢাল, যা সমুদ্রের লবণাক্ততা ও ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে ভেতরের অংশকে রক্ষা করত। এছাড়াও, দেশের ভেতরের দিকেও ঘন জঙ্গল ও বন্যপ্রাণীর বিচরণভূমি ছিল।
  • অপেক্ষাকৃত উঁচু ভূমি: বসতি স্থাপনের জন্য মানুষ অপেক্ষাকৃত উঁচু ভূমি বা নদীর প্রাকৃতিক বাঁধ বরাবর এলাকা বেছে নিত। আজকের অনেক জনবহুল এলাকা তখন হয়তো ছিল নিচু জলাভূমি বা বন দ্বারা আবৃত।

জনজীবন: প্রকৃতি ও সম্প্রদায়ের সঙ্গে একাত্ম

১০০০ বছর আগে বাংলার জনজীবন ছিল প্রকৃতির সাথে গভীরভাবে সংযুক্ত। এখানকার সংস্কৃতি, পেশা এবং সামাজিক রীতিনীতি সবকিছুই গড়ে উঠেছিল নদী ও মাটির ওপর ভিত্তি করে।

  • গ্রামভিত্তিক জনবসতি: বেশিরভাগ মানুষ গ্রামেই বাস করত। গ্রামগুলো ছিল ছোট এবং নদী বা বিলের আশেপাশে গড়ে ওঠা। প্রতিটি গ্রাম ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ, যেখানে কৃষিকাজ এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য পরিষেবা স্থানীয়ভাবে উপলব্ধ ছিল।
  • বাসস্থান: ঘরবাড়িগুলো ছিল মূলত স্থানীয় উপকরণ যেমন বাঁশ, কাঠ, মাটি এবং খড় দিয়ে তৈরি। বন্যা ও বন্যপ্রাণীর আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে অনেক সময় ঘরগুলো উঁচু মাচায় তৈরি করা হতো। সাধারণত একটি বাড়িতে একাধিক পরিবার একসাথে বাস করত, যা সামাজিক বন্ধনকে আরও দৃঢ় করত।
  • পোশাক পরিচ্ছদ: পোশাক ছিল সরল ও আবহাওয়া উপযোগী। পুরুষরা ধুতি পরত এবং নারীরা শাড়ি ব্যবহার করত, যা ছিল মূলত তুলা বা তসর রেশম দিয়ে তৈরি। অলংকার হিসেবে প্রাকৃতিক জিনিস যেমন শাঁখ, পোড়ামাটির গয়না বা ধাতু ব্যবহার করা হতো।

প্রধান পেশা ও খাদ্যাভ্যাস

  • কৃষি: ১০০০ বছর আগে বাংলার মানুষের প্রধান পেশা ছিল কৃষিকাজ। ধান ছিল প্রধান ফসল, যা এই অঞ্চলের উর্বর ভূমিতে প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত হতো। এছাড়াও, ডাল, তৈলবীজ, আখ এবং বিভিন্ন শাকসবজির চাষও প্রচলিত ছিল। কৃষিকাজ ছিল সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ও আবহাওয়ার ওপর নির্ভরশীল।
  • মৎস্য শিকার: নদী ও জলাভূমি থাকায় মাছ ধরা ছিল অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জীবিকা। বাংলার মানুষ মাছ ধরা এবং মাছের উপর নির্ভরশীল নানান ধরনের খাবার তৈরি করতে পারদর্শী ছিল।
  • পশুপালন: গরু, মহিষ, ছাগল ও হাঁস-মুরগি পালন করা হতো, যা কৃষি কাজে সাহায্য করত এবং আমিষের উৎস ছিল।
  • খাদ্যাভ্যাস: ভাত ছিল প্রধান খাদ্য। এর সাথে ডাল, বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি, টাটকা মাছ এবং কিছু ক্ষেত্রে মাংস খাওয়া হতো। রান্না হতো মাটির উনুনে কাঠ বা গোবর জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে। মাটির পাত্রে রান্না করা এবং পরিবেশন করা ছিল প্রচলিত প্রথা।

সামাজিক ও আত্মরক্ষার কৌশল

  • বন্যপ্রাণীর সাথে সহাবস্থান: আজকের তুলনায় তখন বন্যপ্রাণীর সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। বাঘ, কুমির, সাপ এবং অন্যান্য বন্যপ্রাণীর সাথে মানুষের সহাবস্থান ছিল এক স্বাভাবিক ঘটনা। গ্রামগুলোকে বন্যপ্রাণীর আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য মানুষ নানা কৌশল অবলম্বন করত। রাতে আগুন জ্বালানো, দলবদ্ধ হয়ে চলাফেরা করা এবং সতর্ক পাহারা বসানো ছিল সাধারণ চিত্র।
  • জলপথের গুরুত্ব: নদীপথ ছিল যোগাযোগ ও বাণিজ্যের প্রধান মাধ্যম। এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যেতে বা পণ্য পরিবহনে নৌকার ব্যবহার ছিল অপরিহার্য।
  • ধর্মীয় ও সামাজিক জীবন: ধর্মীয় উৎসব এবং সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান ছিল জনজীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। স্থানীয় দেব-দেবী, লোকগাথা এবং ঐতিহ্যবাহী লোকনৃত্য ও সঙ্গীত ছিল তাদের বিনোদনের প্রধান উৎস।

১০০০ বছর আগের বাংলা ছিল এক জীবন্ত এবং পরিবর্তনশীল ভূখণ্ড, যেখানে প্রকৃতি ও মানুষের জীবনযাত্রা একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। যদিও আজকের প্রযুক্তিনির্ভর জীবনে সেই সরলতার অনেকটাই বিলীন হয়ে গেছে, তবুও আমাদের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির গভীরে সেই প্রাচীন বাংলার ছাপ আজও খুঁজে পাওয়া যায়। এই কাল্পনিক চিত্রটি আমাদের সেই পূর্বপুরুষদের জীবনযাত্রা এবং প্রকৃতির সাথে তাদের নিবিড় সম্পর্কের একটি ধারণা দিতে সাহায্য করে।

১০০০ বছর আগে (একাদশ শতাব্দীতে) বাংলায় মূলত ইন্দো-আর্য এবং প্রোটো-অস্ট্রালয়েড (Proto-Australoid) গোষ্ঠীর সংমিশ্রণে গঠিত জনগোষ্ঠী বসবাস করত। এই সময়ে বাংলা অঞ্চলটি ছিল বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের অভিবাসন এবং মিশ্রণের ফল।

১. প্রধান জাতিগোষ্ঠী এবং উৎস

ঐতিহাসিক ও নৃতাত্ত্বিক গবেষণানুসারে, একাদশ শতাব্দীর বাংলায় প্রধানত দুটি প্রধান ধারার মানুষ বাস করত:

ক) আদিম গোষ্ঠী (প্রোটো-অস্ট্রালয়েড ও অন্যান্য)

এরা ছিল বাংলার আদি বা প্রাচীনতম অধিবাসী

  • উৎস: এরা হাজার হাজার বছর ধরে এই অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। নৃতাত্ত্বিকভাবে এদের প্রোটো-অস্ট্রালয়েড (যেমন: সাঁওতাল, মুণ্ডা এবং অন্যান্য আদিবাসী সম্প্রদায়) গোষ্ঠীর সাথে সম্পর্কিত মনে করা হয়।
  • অবস্থান: এরা প্রধানত অপেক্ষাকৃত অনুন্নত বা বনাঞ্চল-ঘেরা এলাকায়, বিশেষ করে রাঢ় অঞ্চল (পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ড সংলগ্ন), উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণ বাংলার কিছু বনাঞ্চলে বাস করত।
  • ভূমিকা: কৃষি ও সংগ্রহভিত্তিক জীবনযাত্রায় এদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি পরবর্তীকালে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি গঠনে প্রভাব ফেলেছিল।

খ) ইন্দো-আর্য গোষ্ঠী

এরা ছিল বাংলার প্রভাবশালী এবং সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠী, যাদের মাধ্যমে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির মূল ভিত্তি তৈরি হয়েছিল।

  • উৎস: এরা উত্তর-পশ্চিম ভারত ও মধ্য এশিয়া থেকে এসেছিলেন। খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ সালের দিকে এই ইন্দো-আর্য শাখাটি ধীরে ধীরে গাঙ্গেয় উপত্যকা ধরে পূর্বে অগ্রসর হতে থাকে।
  • অভিবাসন:
    • প্রথমদিকে তারা উত্তর ভারত বা আর্যাবর্ত (বর্তমান উত্তর প্রদেশ ও বিহার) অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে।
    • খ্রিস্টপূর্ব সময় থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে তারা মগধ (বিহার) হয়ে বাংলায় প্রবেশ করে এবং তাদের ভাষা ও সংস্কৃতিকে এই অঞ্চলের আদিম জনগোষ্ঠীর সাথে মিশ্রিত করে।
    • ঐতিহাসিকভাবে, ১০ম ও ১১শ শতকের দিকে ব্রাহ্মণ, বৈদ্য ও কায়স্থদের মতো উচ্চবর্গের মানুষজনও উত্তর ভারত থেকে বাংলায় এসেছিলেন, বিশেষ করে সেন রাজাদের আমলে।
  • ভাষা: এই ইন্দো-আর্যদের ভাষার মাধ্যমে প্রাকৃত ও অপভ্রংশের পথ ধরে বাংলা ভাষার জন্ম হয়।

২. কেন এই সংমিশ্রণ?

হাজার বছর ধরে বিভিন্ন জাতির সংমিশ্রণ ঘটার পেছনে বেশ কিছু কারণ ছিল:

  • উর্বর ভূমি: গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র নদী বিধৌত এই অঞ্চলটি কৃষি ও জীবনধারণের জন্য ছিল অত্যন্ত উর্বর ও আকর্ষণীয়।
  • বাণিজ্যিক পথ: বাংলা ছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং ভারত মহাসাগরের বাণিজ্যের অন্যতম প্রবেশদ্বার। এই কারণে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গোষ্ঠীর আগমন ঘটেছিল।
  • শাসন এবং রাজনৈতিক প্রভাব: পাল ও সেন রাজাদের মতো শক্তিশালী রাজবংশগুলো বাংলায় তাদের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিল, যা বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষকে প্রশাসনিক ও ধর্মীয় কারণে আকৃষ্ট করেছিল।

সংক্ষেপে, ১০০০ বছর আগে দক্ষিণ বাংলার মানুষজন ছিল আদিম প্রোটো-অস্ট্রালয়েডদের বংশধর এবং ইন্দো-আর্যদের একটি সফল মিশ্রণ। এই মিশ্রণের ফলেই বাংলা ভাষা ও বাঙালি জাতির জন্ম হয়েছিল।

নিখোঁজের ১১ বছর পর দেশে ফিরল ৪ সন্তানের জননী শান্তনা

বেনাপোল প্রতিনিধি : প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর, ২০২৫, ১০:৪৭ পিএম
নিখোঁজের ১১ বছর পর দেশে ফিরল ৪ সন্তানের জননী শান্তনা

নিখোঁজের ১১ বছর পর দেশে ফিরল ৪ সন্তানের জননী শান্তনা বাড়ি ফিরছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভারতের পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে বেনাপোলে পৌঁছান শান্তনা। দুই দেশের ইমিগ্রেশনের কার্যক্রম শেষে সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে শান্তনাকে স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। অবৈধ পথে ১১ বছর আগে ভারত গিয়ে কারাভোগ শেষে বিশেষ ট্রাভেল পারমিটের মাধ্যমে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে দেশে ফিরেছেন বাংলাদেশি এ নারী।

তার ছেলে-মেয়ে ও আত্মীয় স্বজন ১১ বছর পর কাছে পেয়ে খুব খুশি। মানসিকভাবে অসুস্থ শান্তনা খোঁজহীন হয়ে পড়েন আজ থেকে ১১ বছর আগে। পশ্চিমবঙ্গের ঈশ্বর সংকল্প নামের একটি বেসরকারি সংস্থার সমন্বয়ক তপন প্রধানের সহায়তায় বাংলাদেশের ঢাকার সংবাদকর্মী ও ফটো সাংবাদিক শামসুল হুদার মাধ্যমে শান্তনার খোঁজ পায় তার পরিবার। ফেরত আসা নারী শান্তনা বেগম গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার উত্তর রাজিবপুর গ্রামের আবুল সালামের মেয়ে। তার স্বামী স্থানীয় একটি আদালতে মহুরীর কাজ করতেন। শান্তনার পরিবারের লোকজন জানান, শান্তনা মানসিক প্রতিবন্ধী ছিল। দাম্পত্য জীবনে তিনি ৪টি পুত্র সন্তানের জননী। পরিবার থেকে শান্তনা প্রায় প্রায় নিখোঁজ হতেন।

পরে খোঁজ পাওয়া যেত। সর্বশেষ নিখোঁজের ১১ বছর পর ভারতের কানপুরের একটি আশ্রয় কেন্দ্রে গত বছরের ১৭ জুলাই তার সন্ধ্যান পান পশ্চিমবঙ্গের ঈশ্বর সংকল্প নামের একটি বেসরকারি সংস্থার সমন্বয়ক তপন প্রধান। তপন প্রধান এবং বাংলাদেশের ফটো সাংবাদিক শামসুল হুদার সহায়তায় শান্তনা আজ দেশে ফিরল।

এ নিয়ে ৫৬ জন নাগরিক দেশে ফিরলো সাংবাদিক শামসুল হুদার মাধ্যমে। বেনাপোল পোর্ট থানার সেকেন্ড অফিসার খাইরুল ইসলাম জানান, ‘ইমিগ্রেশনের পুলিশ আনুষ্ঠানিকতা শেষে শান্তনাকে বেনাপোল পোর্ট থানায় হস্তান্তর করেছে। সেখান থেকে শামসুল হুদার মাধ্যমে জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ার নামের এনজিও সংস্থা তাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করবে।