রবিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৫, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
রবিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৫, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

বাওবাব গাছ—প্রকৃতির বিস্ময় কেন?

Baobab Tree: বিশ্বের অন্যতম রহস্যময় ও দীর্ঘজীবী ‘উল্টো গাছ’

এস এম পলাশ প্রকাশিত: শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৫, ৭:২৪ পিএম ই-পেপার প্রিন্ট ভিউ
Baobab Tree: বিশ্বের অন্যতম রহস্যময় ও দীর্ঘজীবী ‘উল্টো গাছ’

পৃথিবীতে অসংখ্য বৃক্ষ রয়েছে, কিন্তু কিছু গাছ আছে যেগুলোকে দেখলে মনে হয় প্রকৃতি যেন নিজ হাতে তৈরি করেছে একেকটা বিস্ময়। এমনই এক আশ্চর্য গাছের নাম ‘বাওবাব’ (Baobab)। প্রথম দেখাতেই এই গাছ অন্য সব গাছের চেয়ে আলাদা। বিশাল কাণ্ড, মোটা ছাল, শুষ্ক ডালপালা আর অদ্ভুত আকৃতির কারণে এটি বিশ্বব্যাপী ‘রহস্যময় গাছ’ হিসেবে পরিচিত। বাওবাবকে বলা হয় প্রকৃতির জীবন্ত ইতিহাস, কারণ এর বয়স হতে পারে ৬,০০০ থেকে ১০,০০০ বছর পর্যন্ত!

যখন আমরা পৃথিবীর ইতিহাস দেখি গ্রিক সভ্যতার উত্থান, মিশরের পিরামিড নির্মাণ, প্রাচীন চীনের সাম্রাজ্য গঠন তখন সেই সময়েও আফ্রিকার মরুভূমিতে দাঁড়িয়ে ছিল এই বিস্ময়কর বাওবাব গাছ। সত্যিই, এই গাছ যেন পৃথিবীর নিঃসংশয় সাক্ষী।

এই আর্টিকেল আপনাকে নিয়ে যাবে বাওবাবের রহস্যময় জগতে। জানবেন এর অবিশ্বাস্য ইতিহাস, অদ্ভুত আকৃতি, গোপন রহস্য, মানুষকে বাঁচিয়ে রাখা শক্তি এবং আরও অনেক কিছু। চলুন জেনে নিই প্রকৃতির এই অনন্য ও দীর্ঘজীবী বিস্ময়ের গল্প।

বাওবাব: কেন একে বলা হয় ‘উল্টো গাছ’?

শুষ্ক মৌসুমে বাওবাব গাছের ডালপালা দেখে মনে হতে পারে, যেন গাছটির শিকড় উপরের দিকে উঠে আছে! আকৃতিতে এটি যেন একদম উল্টো হয়ে দাঁড়ানো। এজন্যই স্থানীয়রা একে দীর্ঘদিন ধরে ডাকছে—
‘উল্টো গাছ’ বা ‘Upside-down Tree’

অনেকে আবার বিশ্বাস করেন, কোনো এক সময়ে এক মহান শক্তি গাছটিকে মাটিসহ তুলে উল্টো করে বসিয়ে দিয়েছিল, তাই এর ডাল দেখতে শেকড়ের মতো। যদিও এটি লোককথা, তবে এ গল্পটি এই গাছের রহস্যময়তাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

৬–১০ হাজার বছরের জীবন্ত ইতিহাস

প্রকৃতিতে এমন জীব রয়েছে যারা কয়েকশ বছর বাঁচে। কিন্তু হাজার হাজার বছর? এ যেন কল্পনার মতো! অথচ বাওবাব গাছের ক্ষেত্রে এটি একেবারে বাস্তব।

বিশ্বের কিছু স্থানে বাওবাবের বয়স ৬,০০০ থেকে ১০,০০০ বছর হিসাব করা হয়েছে।
অর্থাৎ:

  • যখন মিশরের পিরামিড নির্মিত হচ্ছিল, তখন এরা ছিল।

  • যখন বিশ্বের প্রথম লিপি লেখা হচ্ছিল, তখনও এরা দাঁড়িয়ে ছিল।

  • যখন প্রাচীন সভ্যতার জন্ম ও মৃত্যু ঘটেছে, তখনও বাওবাব অপরিবর্তিত ছিল।

এ কারণে বাওবাবকে অনেকেই বলেন
প্রকৃতির সবচেয়ে প্রাচীন জীবন্ত স্মৃতিস্তম্ভ

বাওবাবের ৫টি অবিশ্বাস্য গোপন রহস্য

১. কাণ্ডের ভেতর লুকানো বিশাল জলাধার

বাওবাব গাছের শরীরের সবচেয়ে আশ্চর্য অংশ হলো এর কাণ্ড। বাইরে থেকে দেখতে মোটা ও বিশাল, আর ভেতরে রয়েছে প্রাকৃতিক জলাধার!
একটি পূর্ণবয়স্ক বাওবাব গাছ তার কাণ্ডে ১ লক্ষ লিটারেরও বেশি পানি জমা রাখতে পারে।

শুষ্ক মরুভূমির মানুষদের কাছে বাওবাব তাই জীবনরক্ষাকারী। খরা, দুর্ভিক্ষ বা পানি সংকটের সময় এই গাছই হয়ে ওঠে প্রকৃত আশ্রয়। স্থানীয় মানুষরা কাণ্ডের ভেতরের আর্দ্র কাঠ অংশ থেকে পানি সংগ্রহ করে বেঁচে থাকে।

অন্য কোনো গাছই এমন ক্ষমতা রাখে না।

২. প্রাকৃতিক বাড়ি, পানশালা, এমনকি জেলখানাও!

বাওবাবের কাণ্ড এতটাই প্রশস্ত হয় যে এতে কয়েকজন মানুষ আরামে দাঁড়াতে পারে। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে এর কাণ্ডের ভেতর:

  • ঘর–বাড়ি

  • দোকান

  • বার (Bar)

  • জেলখানা

  • সভাখানা

  • শস্য–মজুদঘর

সবই বানানো হয়েছিল। এটি সত্যিই অবিশ্বাস্য।

মাদাগাস্কার, দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় এমন বহু বাওবাব আছে, যেগুলোর ভেতর দিয়ে রাস্তা চলে গেছে বা ভিতরে বানানো হয়েছে ছোট ছোট বসতি।

প্রকৃতির এমন আরেকটি বিস্ময় পৃথিবীতে নেই।

৩. ‘মাঙ্কি ব্রেড’ বাওবাবের সুপারফল

বাওবাবের ফলকে বলা হয় ‘মাঙ্কি ব্রেড’। শুধু পশু নয়, মানুষও এই ফলের জন্য বাওবাবের ওপর ভরসা করে। শুকানো ফলের গুঁড়ো হলো প্রিমিয়াম সুপারফুড, যার গুনাগুণ সত্যি অবিশ্বাস্য:

  • ভিটামিন সি: লেবুর চেয়েও বহুগুণ বেশি

  • ক্যালসিয়াম: দুধের চেয়েও বেশি

  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: ব্লুবেরির চেয়েও several times বেশি

ফল, পাতা, ছাল—সবকিছুই খাদ্য ও ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

৪. ‘ট্রি অব লাইফ’: জীবনের কঠিন সময়েও অটল

আফ্রিকার মানুষ এই বাওবাবকে ভালোবেসে ডাকে
‘Tree of Life’ বা ‘জীবন বৃক্ষ’

কারণ?

  • খরা, আগুন, ঝড় কিছুতেই এরা সহজে নষ্ট হয় না

  • সব অংশই কাজে লাগে

  • মানুষকে পানি, খাদ্য ও ওষুধ দেয়

  • ছায়া দেয়

  • প্রাণীদের আশ্রয় দেয়

প্রকৃতির কঠিনতম পরিস্থিতিতেও টিকে থাকার অদ্ভুত শক্তি আছে এদের। শত শত বছর ধরে এটি মানুষের জীবনে অবদান রেখে আসছে।

৫. পৃথিবীর তিন অঞ্চলে এর বিস্তৃতি

বাওবাব প্রধানত পাওয়া যায় তিন মহাদেশে:

  • আফ্রিকার শুষ্ক অঞ্চল

  • মাদাগাস্কার

  • অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চল

প্রতিটি অঞ্চলের বাওবাব আলাদা রূপ ও আকৃতি নিয়ে জন্মায়। বিশেষ করে মাদাগাস্কারের বাওবাবকে বলা হয়—পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর গাছ

বাওবাব গাছ: প্রকৃতির সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বন্ধু

বাওবাব শুধু গাছ নয়—একটি সম্পূর্ণ ইকোসিস্টেম।
এর ছায়ায় থাকে মানুষ ও পশু;
এর ফল খায় বানর ও পাখি;
এর ভেতরে আশ্রয় নেয় বাদুড়;
এর পাতা ও ছাল হয় মানুষের ওষুধ;
এর কাণ্ডে জমা থাকে প্রাণরক্ষাকারী পানি।

প্রকৃতি যেন নিজের হাতে তৈরি করেছে একটি বহুমুখী জীবন সমর্থন ব্যবস্থা নাম তার বাওবাব।

মানুষ ও বাওবাব: হাজার বছরের সহযাত্রা

আফ্রিকার আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কাছে বাওবাব খুবই পবিত্র। তারা বিশ্বাস করে, এ গাছ মানুষকে রক্ষা করে। অনেক স্থানে বাওবাবের গোড়ায় বসে বিচারসভা হতো। কেউ কেউ আবার মনে করত এই গাছের ভেতর বাস করলে দুষ্ট আত্মা দূরে থাকে।

আবাসস্থলের সংকট, জলবায়ুর পরিবর্তন এবং মানুষের অতিরিক্ত কর্মকাণ্ড আজ অনেক বাওবাবকে বিপদের মুখে ফেলেছে। কিছু বিখ্যাত বাওবাব ইতিমধ্যে মারা গেছে। তাই এই গাছ সংরক্ষণ এখন খুব জরুরি।

গাছ নয় একটি কিংবদন্তি

বাওবাবের গল্প শুনলে মনে হয় এটি একটি গাছ নয়, বরং পৃথিবীর ইতিহাসের নীরব সাক্ষী যা যুগের পর যুগ টিকে আছে নিজের মহিমায়। কখনও পানি দিয়েছে, কখনও খাদ্য, কখনও আশ্রয় প্রতিটি ভূমিকা পালন করেছে নিঃস্বার্থভাবে।

যখন আমরা জীবনের নানা সমস্যায় বিপর্যস্ত হই, তখন বাওবাব আমাদের শেখায়
দৃঢ় থাকো, পরিস্থিতি যত কঠিনই হোক, টিকে থাকাই জীবন।

শেষ কথা

বাওবাব প্রকৃতির এক বিস্ময়।
এটি শুধু দীর্ঘজীবী গাছ নয় একটি সম্পূর্ণ জীবনধারা, একটি ইতিহাস, একটি কিংবদন্তি।
হাজার বছর পরেও হয়তো কিছু বাওবাব পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে থাকবে, দেখবে নতুন সভ্যতা, নতুন মানুষ এবং নতুন গল্প।

মানুষের মতোই গাছেরও গল্প আছে, আর বাওবাব সেই গল্পের সবচেয়ে রহস্যময় অধ্যায়।

লেখক: এস এম পলাশ
কবি, সাংবাদিক, ইতিহাস গবেষক।

ভিডিও দেখুন এখানে

শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বাকেরগঞ্জে দুই যুবদল নেতা বহিষ্কার

ডেস্ক নিউজ প্রকাশিত: শনিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৫, ৯:৩২ পিএম
শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বাকেরগঞ্জে দুই যুবদল নেতা বহিষ্কার

বাকেরগঞ্জ প্রতিনিধি :
দলীয় নীতি, আদর্শ ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বরিশাল দক্ষিণ জেলা যুবদলের আওতাধীন বাকেরগঞ্জের দুই যুবদল নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃতরা হলেন—বাকেরগঞ্জ পৌর যুবদলের সদস্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মনির এবং বাকেরগঞ্জ উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক হাসান আল ইমাম খোকন।
২৯ নভেম্বর (শুক্রবার) কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-দফতর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূইয়া স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের প্রমাণ মিলায় তাদেরকে প্রাথমিক সদস্যসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, দলের স্বচ্ছতা, আদর্শ এবং সাংগঠনিক শৃঙ্খলা রক্ষায় কেন্দ্রীয় যুবদল সবসময় কঠোর অবস্থানে রয়েছে। যুবদলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের শৃঙ্খলার প্রতি দায়িত্বশীল হওয়ার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ দফতর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূইয়া।

ব্যারিস্টার জোহার  আগমন উপলক্ষে বিশাল মটরসাইকেল শো ডাউন

ডেস্ক নিউজ প্রকাশিত: শনিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৫, ৯:০৪ পিএম
ব্যারিস্টার জোহার  আগমন উপলক্ষে বিশাল মটরসাইকেল শো ডাউন

“কাতি গেল, আগুন আইলো”  গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া আলো উৎসবের ঐতিহ্য 

ডেস্ক নিউজ প্রকাশিত: শনিবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৫, ৭:০১ পিএম
“কাতি গেল, আগুন আইলো”  গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া আলো উৎসবের ঐতিহ্য 

“কাতি গেল, আগুন আইলো”  গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া আলো উৎসবের ঐতিহ্য 

বাংলার গ্রামীণ জীবনে কার্তিক মাসের একটি আলাদা আবহ আছে। শস্য উত্তোলনের অপেক্ষা, প্রকৃতির শুষ্কতা, ঠান্ডা হাওয়ার আগমন সব মিলিয়ে এই মাসটি ছিল গ্রামবাসীর কাছে যেমন কষ্টের সময়, তেমনি নতুন শুভ সময়ের আগমনী বার্তা। আর এই সময়টিকেই কেন্দ্র করে জন্ম নিয়েছিল এক অনন্য ঐতিহ্য—কার্তিকের শেষ রাতে আগুন জ্বালানোর উৎসব, যার প্রজন্মান্তরের উচ্চারণ ছিল

“কাতি গেলো, আগুন আইলো… কইরা পুটি মাছ দুয়ারে পইলো…”

এই চরণ শুধু একটি ছড়া নয়; এটি ছিল একটি শ্বাস নেওয়া জীবন্ত সংস্কৃতি, যা গ্রামবাংলার হৃদয়ে আলো ছড়াতো শিশুর হাসির মতোই নিষ্পাপভাবে।


শৈশবের তুলসিতলা থেকে গ্রামের মাঠ এক উৎসবের পথচলা

কার্তিক মাসের ৩০ তারিখ সন্ধ্যা নামলেই গ্রামে এক ধরনের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ত। ছোট-বড় সবাই ছুটে যেত তুলসিতলায়। সেদিন সন্ধ্যা যেন আগুনকে কেন্দ্র করে তৈরি এক উৎসবের অঘোষিত আয়োজন।

বাঁশের মাথায় খড় বেঁধে বানানো হতো ‘ভোলা’ কিংবা ‘বইড়ে’  এক ধরনের মশাল। ছেলেরা দৌড়ে যেত মাঠের দিকে, বড়রা নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে দেখতেন, আর আশপাশ ভরে যেত স্তবকের মতো স্লোগানে:

“কাতি গেল, আগুন আইলো…”

আগুনের লাল আলো আর শিশুর দৌড়ঝাঁপে আকাশ-পাতাল এক সুরে মিলে যেত। মনে হতো অন্ধকারের বুক যেভাবে আলোতে ভেঙে যায়, মানুষও তেমনি অশুভ শক্তির ভয়কে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যায়।


ঐতিহ্যের ভেতরের বিশ্বাস

গ্রামের বড়দের মুখে প্রচলিত ছিল
কার্তিক হলো অশুভ মাস।

এ সময়ে অভাব-অনটন, রোগব্যাধি, অজানা ভয়–এসবের প্রভাব নাকি বেশি থাকত। তাই কার্তিকের শেষ দিনে মানুষ আগুন জ্বেলে দূর করত অশুভ শক্তিকে। আগুন হয়ে উঠত

  • সুরক্ষার প্রতীক
  • শুভ সময়ের আহ্বান
  • অন্ধকারের বিরুদ্ধে মানুষের সাহস
  • নতুন দিনের আলো

আগুনের মশাল ওঠানো ছিল এক ধরনের প্রার্থনা পৃথিবী যেন আলোয় ভরে ওঠে, ঘরে যেন দুঃখ কমে, রোগবালাই দূরে থাকে।


সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মিলনমেলা

এই রাত ছিল শুধু আগুন ঘোরানোর অনুষ্ঠান নয়; এটি ছিল এক ধরনের সামাজিক সংযোগ।

গ্রামের শিশুরা দৌঁড়াতো, বড়রা নির্দেশ দিতেন, মেয়েরা উঠোনে দাঁড়িয়ে দেখত, আর পুরো গ্রাম যেন এক সন্ধ্যার জন্য মিলে যেত।

আগুনের গন্ধ, খড় পোড়ার ধোঁয়া, শিশুর হাসি, আর রাতের ঠাণ্ডা হাওয়া সবকিছু মিলে এই উৎসব তৈরি করত এক অদ্ভুত নস্টালজিয়া, যা আজো অনেকের বুকের ভেতর উষ্ণ হয়ে থাকে।


আস্তে আস্তে বিলীন হওয়া এক ঐতিহ্য

সময় বদলেছে, মানুষের জীবনযাত্রা পাল্টেছে। নিরাপত্তা, ব্যস্ততা, আধুনিকতা—সব মিলিয়ে এই উৎসবটি এখন প্রায় হারিয়ে গেছে।

যে উৎসব কখনো আলোয় আলোকিত করত গ্রামের আকাশ, আজ তা দেখা যায় কেবল কিছু বিচ্ছিন্ন অঞ্চলে।
শিশুরা আগুন ঘোরানোর আনন্দের বদলে এখন ব্যস্ত মোবাইলের আলোয়।
তুলসিতলা, বাঁশ-খড়, দৌড়ঝাঁপ সবই স্মৃতির ফ্রেমে আটকে আছে।


তবু স্মৃতি জ্বলে থাকে আলোর শিখার মতো

আজও যখন কেউ শৈশবের স্মৃতি মনে করে বলে ওঠে

“কাতি গেল, আগুন আইলো…”

মনে হয় সেই আগুন আবার জীবিত হলো।
কারণ ঐতিহ্য শুধু ইতিহাস নয়—
এটি শেকড়ের গল্প, এটি আমাদের গ্রামবাংলার প্রাণ, এটি আমাদের মানুষ হওয়ার পথচিহ্ন।

যতদিন আমরা স্মৃতি হাতে ঐতিহ্যকে মনে রাখি,
যতদিন কোনো শিশু আগুন দেখে আনন্দে চিৎকার করে ওঠে,
ততদিন এই উৎসব হারাবে না

এটি বেঁচে থাকবে আমাদের হৃদয়ে, আমাদের সংস্কৃতিতে, আমাদের শিকড়ে।