একবার ভাবুন তো যদি আপনার কাঁধে তুলে দেয়া হয় তাহলে কতটা আপনি বহন করতে পারবেন? নাকি হাড়গোড় ভেঙ্গে চুরে আপাকে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। ১০০ থেকে দেড় দুইশ কেজি পর্যন্ত এক একটি গাছের টুকরো খুব সহজেই কাঁধে তুলে নিয়ে হেঁটে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে রাখছেন তারা।
সাধারণ মানুষের চেয়ে এদের জীবনের গল্পটা একটু ভিন্ন। চলুন সে গল্প শোনা যাক।
প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঝড়-বৃষ্টি, রোদে পুড়ে, প্রচণ্ড গরম কিংবা হাড় কাঁপানো শীত সব কিছু সয়েই গাছ কাটার কাজ করেন কাঠুরেরা। এই শ্রমিকরা শুধু কাঠ কাটেন না, তারা জীবনের জন্য সংগ্রাম করেন অদম্য শক্তি আর ধৈর্যের সাথে।
কাঠের বোঝা কাঁধে নিয়ে এগিয়ে চলা একজন কাঠুরে আমাদের চোখে সাধারণ দৃশ্য মনে হলেও, বাস্তবে এটি এক অসাধারণ সহনশীলতার পরিচয়। যারা প্রতিদিন গাছ কেটে, কাঠ টেনে, কাঁধে তুলে নিয়ে বাজারে পৌঁছে দেন, তারা যেন একেকজন লৌহ মানব।
প্রকৃতির সাথে লড়াই করেই তাদের জীবন। দিনের পর দিন গাছ কাটার মতো কষ্টসাধ্য কাজের কারণে তাদের শরীর শক্তিশালী হয়। দীর্ঘ সময় ধরে শ্রম দেওয়ার ফলে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, তারা সাধারণ মানুষের তুলনায় দীর্ঘজীবী হয়।
তাদের জীবনে নেই আরামদায়ক অফিস কিংবা এসির ঠান্ডা বাতাস। নেই নিরাপত্তা কিংবা পর্যাপ্ত চিকিৎসার নিশ্চয়তা। কিন্তু তবুও তারা হাসিমুখে কাজ করেন, কারণ পরিবারের মুখে অন্ন জোগানোর একমাত্র ভরসা এই শ্রম।
আজকের এই আধুনিক সমাজে তাদের কাজ হয়তো ততটা মূল্যায়ন পায় না। অথচ শহরের বড় বড় ভবন, গ্রামীণ ঘরবাড়ি, স্কুল, বাজার, ব্রিজ সব কিছুরই ভিত্তি দাঁড়িয়ে আছে এই কাঠুরেদের ঘামে ভেজা শ্রমের ওপর।
বিজ্ঞানীরা বলেন, যারা শারীরিক পরিশ্রম করেন, তারা সাধারণত বেশি সুস্থ থাকেন। কাঠুরেদের জীবন তারই বাস্তব প্রমাণ। তারা নিয়মিত ভারী কাজ করেন, ফলে তাদের শরীর ফিট থাকে, মানসিক চাপ কম থাকে এবং প্রকৃতির কাছাকাছি থাকার কারণে জীবনকালও দীর্ঘ হয়।
এরা আমাদের চোখে হয়তো সাধারণ শ্রমিক, কিন্তু বাস্তবে তারা সমাজের নীরব বীর। প্রতিটি ঘামবিন্দু, প্রতিটি শ্রম আমাদের জন্য একেকটি শিক্ষা জীবনে টিকে থাকতে হলে কঠোর পরিশ্রম আর সহনশীলতার বিকল্প নেই।











